ক্রিকেট; আমাদের আবেগ

প্রকাশঃ মার্চ ৬, ২০১৬ সময়ঃ ৩:০৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:০৯ অপরাহ্ণ

তহিদুল ইসলাম (জাবি প্রতিনিধি)

bangladesh

বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। মাঝে মাঝে বাংলাদেশ আর মাঝে মাঝে মাশরাফি মাহমুদুল্লাহ ধ্বনি। যেন প্রিয় মাতৃভূমির নামের সাথে একেকটা বীরের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। চারিদিকে এমন ধ্বনি শুনে পাশের বাড়ির বৃদ্ধ হয়তো ফিরে যেতে পারেন ১৯৭১ সালের সেদিনগুলোতে যখন বাংলার সকল বয়সী মানুষ দেশের টানে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, রাজপথ মুখরিত করেছিলেন বাংলাদেশ ধ্বনিতে।

আজও মানুষ রাস্তায় নামছে তবে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য নয়, মানুষ রাস্তায় নামছে আবেগের টানে ভালোবাসার জায়গা থেকে। মহান স্বাধীনতার সাথে ক্রিকেট কখনোই তুলনীয় নয়। তবে মানুষের আবেগের সাথে মিশে আছে যে নামটি তাকে উপেক্ষা করার সাধ্য কার?

এখন হয়তো অস্ত্র হাতে দেশ মাতৃকাকে বাঁচাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে না। তবে যুদ্ধ হচ্ছে। এ যুদ্ধ হচ্ছে ব্যাট আর বলের যুদ্ধ। আর যুদ্ধ করছে ওরা; ওরা এগারো জন। ওরা মাশরাফিরা, ওরা দেশ প্রেমে উজ্বীবিত একদল বাংলার দামাল ছেলে। ওরা যুদ্ধ করছে দেশের প্রতিনিধি হয়ে। এ যুদ্ধ দেশের সম্মান বাড়ানোর যুদ্ধ, এ যুদ্ধ পৃথিবীর বুকে দেশমাতার মুখ উজ্বল করার যুদ্ধ, এ যুদ্ধ ১৬ কোটি মানুষের আবেগের মূল্য দেওয়ার যুদ্ধ।

ক্রিকেটের সাথে যুদ্ধ শব্দটির প্রয়োগ দেখে হয়তো কারো কাছে একটু বেশি বাড়াবাড়িই মনে হতে পারে। তবে ক্রিকেট আমাদের আবেগের সাথে এমনভাবে মিশে গেছে যে অন্তত ক্রিকেটপ্রেমী বাঙ্গালীর কাছে এটি বাড়াবাড়ি মনে হবে না। ওরা যখন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে আনে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারি না, আর দশটা ক্রিকেটপ্রেমীর মত আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাস্তায় নেমে আসি।

২ মার্চ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচটা দেখছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলে। খাওয়া-দাওয়া শেষে যখন দ্বিতীয়ার্ধ দেখতে টিভি রুমে প্রবেশ করলাম তখন চোখ কপালে উঠল। একি! তিল ধারণের সমপরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই! জায়গা পেতে রীতিমত অঘোষিত যুদ্ধে নামতে হল। অবশেষে ঠেলাঠেলি করে কোনক্রমে একপাশে দাঁড়ানোর জায়গা পেলাম।

মাহমুদুল্লাহ-সৌম্যরা যখন একটু পরপর চার ছক্কা মারছিল তখন করতালিতে মুখরিত হচ্ছিল টিভি রুম। শুধু করতালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কখনো মাশরাফি কখনো সাব্বির কখনো বাংলাদেশ ধ্বনিতে কেঁপে উঠছিল পুরো কক্ষ। কেউ হয়তো তখনও রাতের খাবারটা খায়নি, কাউকে হয়তো পরদিন সকালেই ছুটে যেতে হবে পরীক্ষার হলে।

তবে তাতে কি? খেলা দেখা চাই-ই চাই। যখন মাহমুদুল্লাহ জয়সূচক শেষ বাউন্ডারিটা মারলেন তখন সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েছিল। কেউ নাচছে, কেউ হাততালি দিচ্ছে, কেউবা সাময়িক সময়ের জন্য চেয়ারটাকে তবলা বানিয়ে বাজাচ্ছে। সবাই যেন বুনো উল্লাসে মেঁতে উঠেছে। আস্তে আস্তে টিভি রুমটা ফাঁকা হয়ে গেল, হয়তো এক সময় রাস্তায় উল্লাসে মেতে ওঠা যুবকগুলো ঘরে ফিরে গেছে। তবে ওরা আবার আসবে, আবার নাচবে, আবার গাইবে। ওরা শুধু আনন্দের মূহুর্তুগুলো নয় কষ্টের মূহুর্তগলোও সমানভাবে ভাগ করে নেয়। মনে পড়ে ২০১২ সালের ২২ মার্চ রাতের কথা যেদিন শুধু মুশফিক-সাকিবরা কাঁদেনি কেঁদেছিল কোটি বাঙ্গালী।

তিলে তিলে গড়ে ওঠা যেকোন কিছুর প্রতি মানুষের ভালোবাসা একটু বেশিই থাকে। ক্রিকেট তেমনই, অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়ে আমাদের ক্রিকেট এই অবস্থানে এসেছে। তাইতো ক্রিকেটের প্রতি আমাদের আমাদের আবেগ-ভালবাসা এতো বেশি। হয়তো এক সময় ছোটখাটো জয়ে বাঙ্গালীর উল্লাসটা এমন থাকবে না। ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রত্যাশা বেড়ে যাবে। তবে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙ্গালীরা সব সময় ক্রিকেটের সাথেই থাকবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G